গণঅভ্যুত্থানে পতনের পর ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার অনলাইনে ভাষণের ঘোষণা দেওয়ার প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ও ম্যুরাল ভাংচুর করা হয়েছে।
প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর
যশোর
যশোরে সাতটি স্থানে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়েছে। এছাড়া শহরের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে শেখ হাসিনার নামফলক গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ১১টা থেকে শুরু করে মধ্যে রাতপর্যন্ত বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা হাতুড়ি দিয়ে ভাস্কর্য-নামফলক ভাঙচুর করে। ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহ আকবর’সহ ফ্যাসিবাদ-বিরোধী নানা স্লোগান দিয়ে ভাঙচুর করে কয়েকটি গ্রুপ। এর আগে থেকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে জড়ো হতে শুরু করে। যদিও গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের দিন এসব ভাস্কর্য ও স্থাপনা কমবেশি ভাঙচুর করে ছাত্র-জনতা।
ছাত্রসমাজের উদ্দেশে শেখ হাসিনার অনলাইন ভাষণের ঘোষণা আসার পরপরই এর পাল্টা কর্মসূচি দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা প্রথমে যশোর পৌরসভা ক্যাম্পাসে শেখ মুজিবুর রহমানের আবক্ষ ভাস্কর্য গুড়িয়ে দেয়। এরপর মোটরসাইকেল স্লোগান দিতে দিতে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল, বকুলতলাতে ভাস্কর্য, জেলা পরিষদে ম্যুরাল, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শেখ হাসিনার স্মৃতিফলক, মনিহার বিজয় স্তম্ভের প্রাচীরে মুক্তিযুদ্ধের সময়কালের দৃশ্যপট খোদাই করা ভাস্কর্য ভাঙচুর করে। সেখান থেকে বিক্ষুব্ধ জনতা সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুর করে গুড়িয়ে দেয়। এছাড়া অভয়নগর, ঝিকরগাছা, কেশবপুরে উপজেলা পরিষদের ভাস্কর্য ভাঙচুর করার ঘটনাও শোনা গেছে।
যশোর কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কাজী বাবুল হোসেন বলেন, কয়েকটি স্থানে ভাঙচুর হয়েছে বলে শুনেছি। কে বা কারা করেছে সেটা জানা নেই।
সিলেট
সিলেটে এবার এক্সকাভেটর দিয়ে ভেঙে ফেলা হয়েছে শেখ মুজিবের ম্যুরাল। বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে স্থাপিত ম্যুরালটির অবশিষ্ট অংশ দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
এর আগে চট্টগ্রাম, রংপুরে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙা হয়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে মুসলিম জনতার ব্যানারে বঙ্গবন্ধুর আকৃতি ভেঙে ফেলা হয়। বুধবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা অবশিষ্ট অংশ এক্সকাভেটর দিয়ে আরেক দফা ভেঙে ফেলে। এর আগে রাত ৯টার দিকে বন্দরবাজার এলাকায় অবস্থান নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা। সেখানে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে তারা এক্সকাভেটর নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে যান। প্রধান ফটক তখন বন্ধ ছিল। পরে তারা তালা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে ম্যুরালের অবশিষ্ট অংশ ও স্থাপনা ভেঙে ফেলে। ভেঙে ফেলা ম্যুরালের পাশে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, কিছু লোক গেটের ভেতর প্রবেশ করে ম্যুরালটি ভেঙে চলে যায়।
প্রসঙ্গত, তাওহিদী জনতার ব্যানারে ম্যুরালটি অপসারণের দাবি জানানো হয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার রাতে মুর্যালটি একদফা ভাঙচুর করা হয়।
চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামে মশাল মিছিল ও বিক্ষোভ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা। রাত সাড়ে ৯টার দিকে এই মিছিল করেন তারা। মিছিল শেষে শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও নগরীর জামাল খান এলাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করেন।
নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বুধবার রাতে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচার করাকে কেন্দ্র করে এ মিছিল করেন বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
রাত ১০টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের পুরোনো একাডেমিক ভবনের সামনে একটি ম্যুরাল ভাঙেন ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী। হাতুড়ি ও পাথর দিয়ে তারা ম্যুরালটি ভাঙেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চমেকের একাডেমিক ভবনের সামনে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি ছিল। সাড়ে ৯টার দিকে ছাত্ররা এসে সেটি ভাঙচুর করেন। এরপর তারা জামাল খান এলাকায় যান। সেখানে দেয়ালে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালও হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে ফেলেন বিক্ষুব্ধ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কর্মীরা।
খুলনা গেজেট/এইচ